Saturday, December 06, 2025

সেলিব্রিটি না হওয়ার দুঃখ থুরি লাভ

আমার এককালে ইয়ে মানে সেলিব্রিটি হওয়ার বড় সাধ ছিল। মানে  ওই " আমার বড় আহ্লাদ ..." টাইপের ফিলিং। কিন্তু জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে করতে সেলিব্রিটি না হওয়ার দুঃখর অনুপাতে লাভের  অংশ অনেক বেশি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করলাম। এই বিশাল উপলব্ধির কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি। আমার বিশ্বাস আপনারা নিজ-নিজ বৌদ্ধিক বিচার দিয়ে পরখ করে এই অনুভূতিগুলির মধ্যে হয়তো কিছু কিছু লুফে নিতেও পারেন।

সেলিব্রিটি হওয়ার শতেক দুঃখের কয়েকটা -


(১) রাস্তার ধারে খোলা নালার ঠিক গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে ফুচকা চেয়ে চেয়ে খেতে পারবেন না । ফুচকার তেঁতুল গোলা জল হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়লে চেটে এই অমৃত সমান পেয় যাতে ওয়েস্ট না হয় সেটা রোধ করতে পারবেন না ।

(২) মেট্রোর ভিড়ে গাদাগাদি হয়ে শহরের পরিবহনের ফেলিং সিস্টেমের 'মা বহন কী' মানে শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে নিন্দা করতে করতে বাড়ি থেকে আপিস ও আপিস থেকে  বাড়ি করতে পারবেন না। 

(৩) ভিড়ে জর্জরিত হয়ে ঘর্মাক্ত কলেবরে বাসে, লোকাল ট্রেনে, মেট্রোতে (ভিড়ে হ্যাদানো এ সি তে), বুড়ো থুত্থুরে ট্রামে ঘটর ঘটর করে আসতে যেতে পার্শ্ববর্তী যাত্রীর মোবাইলের কথপোকথনের মাধ্যমে তাঁর/তাঁর এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলির/মায় প্রতিবেশীর প্রাইভেট লাইফের রসালো খুঁটিনাটি কান লাগিয়ে শুনতে পারবেন না। ইন ফ্যাক্ট, কান লাগানোর প্রয়োজন ও নেই এমনিই লাউড স্পিকারের ঘোষণার মত শোনা যায়। এর চাইতে হেব্বি মনোরঞ্জনকারী লাইভ সিরিয়াল আর আছে কি ?

(৪) শহরের অলিতে গলিতে বেজার বেকার ঘুরতে ঘুরতে ভুল করে সুলভ শৌচালয় ঢুকে পড়ে ইয়া লম্বা জিভ কেটে সরি বলে ছিটকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। 

(৫) কোনো মিটিং মিছিলে টাইম পাস করার জন্যে "চলবে চলবে না" বলে ভাগ নিতে পারবেন না ।

(৬) পাবলিক ফাংশনে কেউ আপনাকে সম্মানীয় অতিথি বা বিচারক হিসেবে নিমন্ত্রণ জানাবে না বা হঠাৎ দু লাইন বলার জন্য অনুরোধ করবে না। আপনার যদি আমার মত পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয় থাকে তাহলে এই না বলার আনন্দ যে কি অপরিসীম সেটা আর লিখে বাতলাতে হবে না। 

(৭) ছুটির দিনে (আমার ক্ষেত্রে প্রতিদিনই) শতেক বার ধোয়া রং উঠে যাওয়া টি শার্ট ও পাজামা, ছেঁড়া মোজা বা চারটে ফুঁটোওয়ালা সোয়েটার (শীতের দিনে) পড়ে রাস্তায় বেরোলে প্যাপারাজির ছিছিকার বা আপনার অসামান্য স্টাইল স্টেটমেন্টের উচ্চৈরবে প্রশংসা শুনতে/পড়তে হবে না ।

(৮) আধ ঘুমে কোনোরকমে বাড়ি থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে গলির মোড়ে অমুকদার দোকানে দুধ, ডিম, পাউরুটি, ম্যাগীর প্যাকেট কিনতে পারবেন না। আধ খানা ডিম ফাটা বেরোলে তা নিয়ে তুমুল দামাল ও সরকার কে গালাগাল দিয়ে মনের/পেটের/মুন্ডুর/আত্মার ক্ষার মেটাতে পারবেন না।

(৯) আপনার জীবনের প্রতিনিয়ত হাগা/মোতা/হাঁচা/কাঁশা/হাই তোলা/প্রেম করা/ডেটিংয়ে ফেল্টু মারা/রোজ চান করেন কিনা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যাথা থাকবে না।

(১০) আপনাকে পাবলিক রিকগনিশনের জন্য পোলোরের পর পোলোর মেক আপ চাপানোর দরকার হবে না । বিছানা থেকে ঘুম চোখে দরজা খুললেই পাশের বাড়ির সব জানতা মাসিমা "কি ঘুম হলো?" বলে হেঁসে গুড মর্নিং জানাবে।

ইন শর্ট, আপনার জীবন আপনারই থাকবে। ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার অপার স্বাধীনতা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না। আপনার জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়কে মশলা মাখিয়ে কুরুচিকর করে কেউ বিক্রি করবে না। আর রাতে পেট ভরে রুটি মাংশ/মাছ ভাত খেয়ে নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোতে পারবেন।

এবার বলুন এই পোস্টটির ক্যাপশনটা সার্থক কিনা।

Wednesday, November 19, 2025

অদ্ভুতুড়ে ফোন

আমার ল্যান্ড লাইন... ঠিক শুনেছেন । আমার একটা মধ্যযুগীয় ল্যান্ড লাইন আছে যেটা কখনও ব্যবহারে আসে না। শুধ রাখা আছে। কিন্তু সে আমারই মতো কাজ পাগল তাই আপনা আপনি বেজে ওঠে দিনে দুপুরে। রিসিভার তুলে দেখেছি। ওপাশে কোন আওয়াজ পাই নি... কেউ কথা বলে না। তবে কে বাজায় ফোনটা ? 

হয়তো কেউ আলোকবর্ষ দুর থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করছে। আমি এক সময় দৃঢ় বিশ্বাস রাখতাম যে একদিন না একদিন অন্য গ্রহ থেকে কোনো এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল প্রাণী আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে...নিজের ভাষায় হ্যালো বলবে। এ কি সেই? 

এক সন্ধ্যে দিদি জামাই বাবু সামনে বসিয়ে ভালো করে বোঝায় সম্ভব আর অসম্ভব, বাস্তব ও কল্পনা, বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক, গল্প ও আসল জীবনের মধ্যে ফারাক। তবু ও একটা ক্ষীণ আশা মনের ভিতর ধড়ফড় করে।

ফোনের কৃঙ্কিরানি শুনে আজও রিসিভার তুলেছি , হ্যালো হ্যালো করে বার চারেক গলা ফাটিয়েছি তারপর কান লাগিয়ে শুনবার চেষ্টা করেছি ওপার থেকে ইটির গলায় আন্তরিকতা জড়ানো, "কি কেমন আছ ?"

পাইনি... শুধু হিমশীতল স্তব্ধতা আর কিছু না।

তবু ও অপেক্ষায় আছি।

বন্ধু কথা কও... কথা কও... নীরব নাহি রও... কথা কও... কথা কও...

Saturday, September 20, 2025

আবার মিতিন


মিতিন এবার পরিবার সহ কুলুতে। বেড়াতে গিয়ে ওই আর কি যা হয় চোর ছ্যাঁচোর ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়া। ঢেকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। দশহরার সময় কুলু ভিড়ময়। থাকার জায়গা পাওয়া ভার। আগের থেকে বুকিং যে পার্থ কেন করেনি! 

শেষে ওদের লোকাল ড্রাইভার টিংকু সিংহের সৌজন্যে, কুলু থেকে একটু বাইরে, একটি কটেজে দুটি ঘর পাওয়া গেলো। একটিতে মিতিন, পার্থ ও বুমবুম আরেকটাতে মিতিনের বোন সহেলি, বর অবনী ও মেয়ে টুপুর ( মিতিনের সহযোগী)। তোমরা জানো নিশ্চই মিতিন একজন পেশাদার গোয়েন্দা । ওর এজেন্সির নাম থার্ড আই ।

তা যা বলছিলাম । কটেজটা বেশ ছিমছাম , সাজানো গোছানো। কিন্তু গোল বাঁধলো যখন মিতিনের ছেলে বুমবুম কম্পিউটার টেবিলের ড্রয়ারে একটা পেনড্রাইভ কুড়িয়ে পেলো। কৌতূহলী মিতিন আর ওর স্যাঙ্গাত টুপুর  (বোনঝি) তৎক্ষণাৎ বসে পড়ল পেনড্রাইভে কি আছে দেখতে। 

ও বাব্বা:! এ কি যে সে ব্যাপার। পেনড্রাইভ ভর্তি যে নাম করা আঁকিয়ে নিকোলাস রোয়েরিকের আঁকা পেইন্টিংয়ের ফটোতে ভরা!! আবার সে রাত্রেই কটেজের মালিক বিভব শর্মার সঙ্গে স্থানীয় এক চিত্রকর , বৈজনাথ রাইএর, কথা কাটাকাটি কানে এলো। বৈজনাথ রেগেমেগে চলে যাবার পর বিভব শর্মাকে পরের দিন মিতিন প্রশ্ন করতে ছাড়ে? 

জানা গেলো বৈজনাথ কে নাকি দুজন টুরিস্ট, যারা এই কটেজেই, মিতিনদের ঘরখানাতে উঠেছিল, তিনটি চিত্র বানাতে কিছু অগ্রিম টাকা দেয়। বৈজনাথ পেইন্টিংগুলি বানিয়েও দ্যান। কিন্তু বাকি টাকা বৈজনাথকে না দিয়েই সেই দুজন টুরিস্ট হাপিস। বোঝো কাণ্ড!

ওই দিকে বিকেলে দশহরার মেলাতে বৈজনাথের সঙ্গে মিতিনের আকস্মিক ভাবে দ্যাখা । মিতিন গল্পো জুড়ে দেয়।  বৈজনাথ কথায় কথায় জানান যে তাঁকে ওই দুজন টুরিস্ট রোয়েরিক সাহেবের তিন খানা আঁকা ছবির নকল করতে দিয়েছিল।

পর দিন আর সোজা মানালি যাওয়া হলো না। মানালির পথে নাগোরে রোয়েরিক সাহেবের আর্ট গ্যালারিতে ঢু মারা ঠিক হলো। পোঁছে এ কি ধাঁধা ?

আর্ট গ্যালারিতে কেউ বা কারা রাত্রে গ্রিলের দরজা কেটে জানালার কাঁচ ভেঙে ঢুকবার চেষ্টা করেছে। রাতের গার্ডকে হাত পা মুখ বেঁধে খাদের ধারে ফেলে রাখা হয়েছে। খানাতল্লাশি চলছে। স্বয়ং ডি এস পি, আশুতোষ শাহের পর্যবেক্ষণে। 

মিতিন নিজের পরিচয় দিল ডি এস পি ও গ্যালারির ম্যানেজার, কিশনলাল দুগ্গর কে। পেনড্রাইভটি দেখিয়ে জানালো কি ভাবে সেটা পেয়েছে আর কী আছে তার মধ্যে। একটি অনুরোধ ও রাখলো। ফার্স্ট ফ্লোরে, যেখান, গরাদ ও কাঁচ ভাঙ্গা হয়েছে, সেখানকার ছবিগুলো আবার নিরীক্ষণ করা হোক। 

কিছুক্ষন পর কিশনলাল দুগ্গর ফিরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসলো। হ্যাঁ মিতিন যা সন্দেহ করেছে ঠিক তাই। তিনটি ছবির অরিজিনাল বেমালুম লোপাট ও তার জায়গায় তাদের কপি রাখা। আশুতোষ শাহ রেগে কাঁই। এর একটা হ্যস্ত ন্যস্ত করতেই হবে। কিশনলাল তো মিতিনকে বলেই ফেললো একটু ব্যাপারটা দেখে নিতে মানে পুলিশী ইনভেস্টিগেশনের সঙ্গে সঙ্গে একটা প্যারালাল ইনভেস্টিগেশন চালাতে। মিতিন এক কথায় রাজি। 

তারপর আর কি ? কুলু থেকে নাগোর থেকে মানালি থেকে মণিকরন সাহাব থেকে আবার কুলু চোরদের পিছন পিছন দৌড়ানো। শেষমেষ মিতিন বিজয়িনী। 

গল্পটি ইউটিউবের থ্রিলারল্যান্ডে শোনা। ভালো লাগলো ওদের উপস্থাপনা। তাই জানালাম। ভালো লাগলে শুনো। সুচিত্রা ভট্টাচার্যর লেখা মিতিন মাসি সিরিজের 
কুড়িয়ে পাওয়া পেনড্রাইভ। 

এই গল্পের মূল আকর্ষণ হলো কুলু মানালি এবং তার আশেপাশের সব জায়গাগুলোর বিষদ বর্ণনা। আর ঐতিহাসিক শিল্পী নিকোলাস  রোয়েরিক ও তার আর্ট গ্যালারিটিকে প্লটে সম্মিলিত করা।

বইটি আমাজনে উপলব্ধ ও দেখলাম। পড়তেও পারো।

আবার দ্যাখা হবে...

টাটা 

পুনশ্চ : উপরের ছবিটি থ্রিলারল্যান্ডের ভিডিও থেকে একটি স্ক্রীন গ্র্যাব 




Monday, September 15, 2025

ভর দুপুরে

এক পশলা বৃষ্টির পরেই আকাশটা শারদীয় লাগে। যদিও এখন বর্ষাকাল শরৎ নয়। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একগাদা কালো ভারি মেঘ এসে জমজমাট নীল রংটা মুছে ফেলে। প্রায় দুমাস যাবৎ এই চলছে। রোদ আর অন্ধকারের খেলা।

এখন পুজো আসছে বলেই হয়তো বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু বাদলের মেজাজের কোনো ঠিক নেই। কখন যে আবার ঝরঝর করে জলে জলাক্কার করবে কে জানে।
দুপুরে পিছনের দরজা দিয়ে এক ফালি সোনালী রোদ ঘরের দেওয়ালের গায়ে তেরছা ভাবে এসে পড়েছে। এরকম নরম দুপুরে বই পড়তে পড়তে ঝিম ধরে। মনে হয় বসে ঢুলি ওই চিলতে রোদ্দুরটাকে জাপটে ধরে। আবার কবে আসবে কে জানে।

গড়িমসি করি। বাইরের দরজায় কে যেন টোকা মারল। উঠে দেখতে ইচ্ছে করে না। দুপুরের আমেজ ভঙ্গ করে কে? চেঁচিয়ে বলি এখন নয় পরে এস। তবুও টোকা থামে না। আরো জোড়ে ...

উঠে দরজা খুলে দেখি কেউ নেই । একখানা হ্যান্ডবিল মাটিতে লুটোচ্ছে। তুলে দেখি লেখা আপনি কি এখনো বাঁচতে চান? যোগাযোগ করুন এই নম্বরে XXXXXX৯৯৯৯।

কি অবান্তর প্রশ্ন। কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিই।

***

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বালিশের পাশে মোবাইলে সময় দেখি - একটা বাজতে দু মিনিট। ঘুমের মধ্যে মনে হয়েছিল কেউ যেন দরজায় কড়া নাড়ল। এত রাতে ! পাশ ফিরে শুয়ে ভাবলাম স্বপ্ন হয়তো। না:! আবার যেন আওয়াজ হলো। 

কিছুক্ষন পর চৌকিদারের শীষ দেওয়ার শব্দ শুনলাম। ঠক ঠক ঠকাং - ওরই হাতের লাঠির আওয়াজ । বাড়ির সামনের পার্কের রেলিংগুলোতে বাজাতে বাজাতে যায় । একটু সাহস বাড়ে। উঠে সামনের দরজা খুলি। কই কেউ নেই তো। ব্যালকনিতে একটা চৌকো কাগজের টুকরো পড়ে আছে। হ্যান্ডবিল ভেবে তুলি। কিন্তু এত রাতে কেই বা হ্যান্ডবিল বিলোয়? 

কাগজটার এপিঠ ওপিঠ দেখি। কিছু লেখা নেই। শুধু মাঝখানে  একটা প্রশ্ন চিহ্ন আঁকা। সাদার উপর কালো। ব্যালকনির ধারে গ্রিল লাগানো দেওয়াল । বেশি উঁচু নয়। কোমর অবধি। দেওয়ালটার ধারে এলেই গলির রাস্তাটা দেখা যায়। জনহীন, নিঃস্তব্ধ। আরেকটু ঝুঁকে দেখি। দূর অনেকদূর অবধি দেখা যায়। চৌকিদার তার এই গলির রাউন্ড শেষ করে পাশের গলিতে টহল দিচ্ছে। আওয়াজ পেলাম। 

ঘন অন্ধকারে বড় বড় গাছগুলি ছায়ায় ঘেরা। গলির মোড়ে সেই জমাট ছায়ার মধ্যে মনে হল কে যেন নিবিড় হয়ে মিলিয়ে গেল। ছায়াসম।

দরজা বন্ধ করে শোবার ঘরে ফিরে এলাম। যদিও জানি আজ আর ঘুম হবে না।


Sunday, August 31, 2025

প্রতিবেশী



আমার ঠিক পাশের বাড়ি।  বাড়ি নয়। একতলার ফ্ল্যাট। আমারও ওদেরও। শুধুমাত্র একটাই দেওয়ালের ব্যবধান। দেওয়ালের উপর রেলিং। রেলিংটা ডিঙ্গোতে পারলেই ওদের ফ্ল্যাটের বাড়ানো ববারান্দায় গিয়ে পড়বো।  

রেলিং কিন্তু কখনোই ডিঙ্গোইনি। 

কথাও খুব একটা বেশি হয় না । ওই মাঝে মধ্যে "কি কেমন আছেন?  ভালো?" এই ধরনের আদান প্রদান। কিন্তু ওই বাড়ির বৌদিকে দেখেছি সকাল সকাল  ভেজা কাপড়গুলো বারান্দায় মেলতে। দেখে মনে পড়ে গেছে আমাকেও কাপড় ধুয়ে মেলতে হবে। ওদের বাড়ির কাজের লোকটি ঠিক আসে দুপুরে। এই বারোটার থেকে একটার মধ্যে। আমি ভিতর ঘর থেকেই আওয়াজ পাই। তারপর তার বারান্দা ধোয়ার শব্দ শুনে মনে হয় সবকিছু ঘড়ির কাঁটার তালে তালে চলছে। 

আশ্বস্ত হই।

রাত্রে সদর দরজায় তালা লাগাতে গিয়ে এক ফাঁকে ওদের দরজার দিকে উঁকি মারি। আমার ব্যালকনি থেকে ওদের দরজাটা দ্যাখ যায়। না: ! আলো জ্বলছে। লোহার জাল দেওয়া দরজাটা ভ্যাজানো। কিন্তু ভিতর ঘরের মানে বসবার ঘরের কিছুটা অংশ দ্যাখা যায় যতক্ষণ না কাঠের দ্বিতীয় দরজাটা বন্ধ করা হয়। আমার ফ্ল্যাটেরো ওই রকমই প্যাটার্নের দরজা। 

লোক দ্যাখা যায় না বটে কিন্তু মৃদু গলার শব্দ পাই। কথার টুকরো ছুটে আসে। নিঃশ্বাস ফেলি। সব ঠিক আছে। ঘড়িতে বাজে দশটা। 

নিশ্চিন্ত হই।

***

কিছুদিন হলো ওদের ফ্ল্যাটের দরজাটা বন্ধ। কাঠের দরজাটাও। মহিলাকেও দেখতে পাচ্ছি না। ভেজা কাপড় দড়িতে ঝুলছে না। ওনার আবার ফুঁসফুসের ব্যামো আছে। প্রায়:সই দমকা কাশির আওয়াজ পাই। বেশ কিছুদিন সেই আওয়াজটাও পাচ্ছি না। 

ভাবি মেয়ের বাড়ি হয়তো বেড়াতে গেছেন। বা হয়তো ছেলের কাছে। অস্ট্রেলিয়ায়? ছেলের বউয়ের সাথে তেমন বনিবনা ছিল না। কিন্তু দুরত্বে মনের টান বাড়ে। হয়তো নাতনির কথা মনে পড়ে গিয়ে মন কেমন কেমন করে উঠেছে। দুপুরে বেলা কাজের মেয়েটি কিন্তু রোজ আসছে। হয়তো ওর কাছে বাড়ির চাবি দেওয়া আছে। অনেকদিনের বিশ্বস্ত কাজের লোক!

দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি।

***

মনটা উদাস হয়ে গেলো। বিদেশ মানে তো মাস খানেকের ধাক্কা। 

একা একা লাগে। ব্যালকনিতে আর বসি না । ভয় ভয় করে। আমিতো একা থাকি। পাশের বাড়ির ওরা না থাকাতে ভরসা পাই না। কিসের ভরসা ? 

যদিও আগেই বলেছি খুব একটা আলাপচারিতা হতো না। কিন্তু তবুও মানুষের নীরব উপস্থিতিও প্রতিদিনকার জীবন যাত্রার একটা বিশাল  জায়গা জুড়ে থাকে। পাড়াটা বড়ই চুপচাপ মনে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নিঃশব্দতা যেন আরো গাঢ় হয়ে উঠছে। ছোটখাটো খুটখাট শব্দগুলোও নির্জনতা ভেদ করে শেলের মতো বিঁধছে। অদ্ভুত এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। 

ভাবছি কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও ঘুরে আসব। বন্ধুর বাড়ি। বা কোনো আত্মীয়র কাছে। কিন্তু সবাই আজকাল বড় ব্যস্ত। সময়ের সবার কাছে বড় অভাব।

***

কাল দুপুরে শুনি পাশের ফ্ল্যাটের সদর দরজা খোলার আওয়াজ। কাজের মেয়েটি বোধহয় এসেছে। কান লাগিয়ে আরেকবার শুনি। কেউ যেন দরজা খুলে দিল মনে হলো। চাবি ঘোরানোর আওয়াজ তো পেলাম না।

বাইরে বেরিয়ে দেখি মেয়েটি বারান্দা ধুচ্ছে। ভাবলাম জিজ্ঞেস করি। তারপর ভাবলাম যদি কিছু মনে করে। তাই আর প্রশ্ন করি না। যাওয়ার সময় মনে হলো কেউ যেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করলো। তাহলে কি ওরা আছে?

***

আজ সকালে মহিলার গলার আওয়াজ পেলাম। বাইরে বসে স্বামী স্ত্রী দুজনে চা খাচ্ছেন। ফ্ল্যাটের দরজাটাও খোলা। আসতে যেতে নজরে পড়ছে। কাজের মেয়েটি দুপুরে এসেছে। মহিলার সঙ্গে কথাবার্তাও টুকটাক চলছে। সংসারের নানান আলাপ আলোচনা ভেসে আসে। 

ঘড়ি দেখি। মিনিটের আর সেকেন্ডের কাঁটাগুলো নিজেদের তালে তালে ঠিক চলেছে। ন পিসিকে বলেছিলাম সপ্তাহ খানেকের জন্যে ঘুরে যাবো। ভাবছি আজ ফোন করে যাওয়ার প্রোগ্রামটা ক্যান্সেল করে দেব।

কি বলেন?






Friday, August 08, 2025

লাম লামা

আমাদের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। কাঠ বাঙ্গাল। তাঁর হিন্দী ছিল ভীষন ভাবে বাঙ্গাল ঘ্যাসা  মানে হেভিলি এক্সেন্টেড। কিন্তু তাই বলে কি উনি আলাপচারিতায় পিছ পা ছিলেন। মোটেই না। বরং আগ বাড়িয়ে পথযাত্রীদের সঙ্গে  অশুদ্ধ হিন্দীতে ওনার বার্তালাপ-এর গল্পো ছিল আমাদের হাঁসির খোরাক।

যেমন বাস স্ট্যান্ডে বাসের জন্য অনেক ক্ষণ অপেক্ষারত থেকে সময়ে বাস না পাবার আক্ষেপ জানাতেন পাশের যাত্রীকে, "পইলে ২১৩ নম্বর বাস বহুত ঘন ঘন আতা থা। আজকাল ক্যা হো গেয়া। অনেক প্যারাশানি হোতা হ্যায়।" পাশের আগুন্তুকটি ও কি বুঝে মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেন। 

একবার বাসে চড়ে মালভিয়া নগর যাচ্ছিলেন সেই মেসোমশাই। জায়গাটি অপরিচিত হওয়ায় বাসের কন্ডাক্টর কে উনি অনুরোধ জানালেন, " মালব্ব নগর আনে সে হামকো লামা দেনা"। কন্ডাক্টরটি ও ছিল রসিক বটে। স্টপ টি আসাতে উনি মেসোমশাইকে বল্লেন, "অব আপ লাম যাও"।

আমার মা বিবাহের পূর্বে অনেক বছর দিল্লীবাসিনী ছিলেন। সেই দেশ বিভাগের আগে মামাদের কাছে আসা তারপর আর ফিরে যাওয়া হয়নি। কিন্তু মার হিন্দীতে ও বাংলা টান ছিল প্রবল। মা কিছুতেই হ্যায় বলতে পারতেন না। হয়ে যেতো হায়। আমরা এ  নিয়ে প্রচুর হাঁসি ঠাট্টা করতাম।

আমাদের বাড়িওয়ালি ছিল ঠেট পাঞ্জাবি। কিন্তু মা দিব্যি ওঁর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতেন। উনি ওনার ভাষায় মা নিজের ভাষায়। পরে মাকে যখন আমরা জিজ্ঞেস করতাম উনি কি বললেন মা বুঝেছেন কিনা মা ঘাড় নাড়িয়ে জবাব দিতেন, "না"। ওনার ও অবস্থা নিশ্চই ছিল তথৈবচ কিন্তু দুজনে দুজেনের কথা সসম্মানে ও সাগ্রহে শুনতেন অধৈর্য্য না হয়ে। একেই বোধহয় সভ্যতা বা ভদ্রতা বলে।

তখন কার দিনের মানুষরা ভিন্ন প্রকারের ছিলেন। তাদের বোধ, সংস্কার, ভদ্রতা জ্ঞ্যান ছিল অন্য। আজ তাঁরা নেই । সেই মুল্যবোধ ও আর নেই।

Tuesday, July 29, 2025

एक अधूरी कहानी

अजीत  बाबु एक साधासीधा जीवन व्यतीत करनेवाले आम नागरिक थे।  घर संसार भरापूरा  ही था  पर मन में शांति न थी। बीवी नौकरीशुदा थी , बच्चे नामी प्राइवेट स्कूल में पढ़ते थे। आमदनी अच्छी थी इसलिए खर्चों से परहेज़ न था।  पर जैसा कि मैंने पहले कहा अजीत बाबु दिली तौर  पे खुश न थे। 

उनके लिए शादी एक समझौता ही था । ऐसा समझौता जो उनके माता पिता ने उनको करने पर मजबूर किया था। अगर होती उनकी शादी कुसुम से तो जीवन के मायने ही बदल जाते। फिर तो रोज़ शामो सहर सतरंगी रंगों से रंग जाते। अब क्या है?  सुबह ऑफिस जाना शाम को ऑफिस से घर आना, गृहस्थी के नाना प्रकार के खर्चों का ब्योरा रखना, खर्चे कम क्यों नहीं हो पा रहे हैं उसपे सुशीला से बहस करना और फिर खाना खाकर सो जाना। हां, उनकी पत्नी का नाम सुशीला ही थी । पढ़ी लिखी, सुघड़, समझदार और सहनशील । मां ने यही सारे गुणों को देखते हुए अपने "नासमझ" बेटे के लिए उसे चुना था। चुनाव सांसारिक अनुभवों पर आधारित था प्यार मोहब्बत के दावों पर नहीं। 

सुशीला ने वैवाहिक जीवन के प्रारंभिक कुछ महीनों में ही भांप लिया था कि उनके पति का मन जीतना उसके लिए संभव नहीं है। फिर भी गृहस्थी के सारे कर्तव्यों को बिना शिकायत ही उसने बड़ी सूझबूझ से निभाने का बीड़ा उठा लिया था। बच्चों को पढ़ाना, घर संभालना, खाना बनाना और एक समय अजीत बाबू के नौकरी छूट जाने पर घर के पास एक स्कूल में वरिष्ठ शिक्षिका का पदभार संभाल लेना उसके निजी निर्णोयों में से कई थे। अपने पति से पूछना आवश्यक नहीं , ऐसा न था, पर सुशीला जानती थी अजीत के शख्सियत में ठोस निर्णय लेने की क्षमता ना के बराबर ही था। इसलिए सुशीला, जो भी घर और बच्चों के खुशी के लिए ठीक समझती, अपने आप ही सब कर लेती। अजीत बाबू को कभी कभी महीनों बाद पता चलता कि घर के रुटीन में कोई परिवर्तन हुआ है। वे सोचते कुसुम होती तो मुझको खुद ही बताती पर ये तो सुशीला है। ये क्यों मुझे बताएंगी? सुशीला तो इस घर की एकछत्र मालकिन है। अजीत बाबू तो सिर्फ पैसे कमाने की मशीन बन कर रह गए है। इत्यादि...

मुद्दे की बात यह थी कि सुशीला और अजीत संसार नामक गाड़ी के दो पहिए जरूर थे पर गाड़ी फिर भी ज़िंदगी के दो समांतराल ट्रैकों पर चल रही थी। गाड़ी उलट नहीं रही थी इसका श्रेय अजीत बाबू अपने ए टी एम कार्ड को देते थे । सुशीला की इसमें कोई  बौद्धिक, वित्तीय या भावनात्मक सहयोग उनको दिखाई नहीं पड़ता था। किसी भी सांसारिक समस्या का समाधान या निष्पादन "अगर कुसुम होती तो ...." से शुरू होकर वही खत्म हो जाता था। 

****

अजीत और कुसुम किसी ज़माने में पड़ोसी हुआ करते थे। धीरे धीरे उनके विशुद्ध दोस्ती में प्यार का समायोजन हुआ। कुसुम खूबसूरत होने के साथ साथ बातें भी बहुत मिठी मिठी करती थीं। उसे अजीत से हमदर्दी था। उसकी माली हालत कुसुम के पारिवारिक समृद्धियों से कम था। अजीत के पिता नौकरी पेशा थे और कुसुम के पिता सुलझे हुए व्यापारी। 

कुसुम ने अजीत को, हर हालात में कंधे से कंधा मिलाकर चलने का, आश्वासन दिया था। अजीत दृढ़ निश्चित था कि कुसुम ऐसा ही करेगी। परन्तु प्यार में बह जाने के बावजूद अजीत अपने पिता के समक्ष कभी यह कह न पाया कि कुसुम से वह विवाह करना चाहता है। कुसुम ने भी इस बात पर कभी जोर नहीं दिया। दूर क्षितिज पर विवाह का तारा टिमटिमाता रहा और वे दोनों उस तारे को देख देख फूले न समाते। पर किसी ने भी इस योजना को कार्यान्वित करने की पहल नहीं की।

और एकदिन कुसुम की शादी हो गई। अजीत के माताश्री को उसकी मानसिक स्थिति तब ज्ञात हुई जब वह सी ए की अंतिम परीक्षा पास न कर सका। 

दो साल बाद अजीत के सी ए बनते ही उन्होंने सुशीला का चयन कर सामाजिक स्वीकृति के साथ घर ले आए।

प्रेम का झिलमिल तारा बुझ सा गया। पर क्षितिज पर उसकी मृत रोशनी की एक रेखा , पता नहीं कैसे, समय के उतार चढ़ाव को अमान्य कर, जीवित रही। वो रेखा घर जलाने के काबिल न थी। पर वह अजीत के मन को प्रतारित करता रहा।

और सुशीला, सब कुछ जानते हुए भी कभी सवाल जवाब में न उलझ, अपने बच्चों के भाग्यों को संवारने में जुटी रही।

***

फिर एकदीन अकस्मात , जैसे कुसुम अजीत बाबु के जीवन से निष्कासित हुई थी वैसे ही दोबारा आ धमकी। धमाका ही था मानिए। धमाके कहके नहीं फूटते। अचानक विस्फोट तहस नहस कर अपनी बंजर निशानियां छोड़ जाती है। पुनर्वार उसकी आने की कल्पना कर मनुष्य सहम जाता है पर उसे बुलाने की तजवीज नहीं करता। 

अजीत बाबु ऑफिस के किसी कलिग के शादी पे एक शाम के लिए शहर के बाहर जाने पर विवश हो गए। वैसे तो उन्हें घर से ऑफिस और ऑफिस से घर के अलावा कहीं और जाने का मन नहीं करता था पर कलिग के साथ अच्छे संबंध थे तो मना न कर पाए। ढाई सो किमी की दूरी अधिक तो नहीं पर सुशीला के हाथ की चाय न जाने क्यों बहुत याद आने लगी। 

बहरहाल शादी के मंडप पर पहुंच अपने बाकी कलिगों को ढूंढते ढूंढते नजर एक जगह जाकर गढ़ गई। एक अकेली औरत भीड़ से थोड़ी दूर एक कुर्सी पर बैठी किन्हीं सोचों में गुम सी लग रहीं थीं। उसकी शक्ल काफी जानी पहचानी सी  थी। कीमती सारी, गहनों और मेक अप से लदी हुई। वैसे तो मक अप की आवश्यकता नहीं थी क्योंकि उसकी व्यक्तित्व में एक अलग ही बात थी। गंभीरता के साथ साथ एक अजब उदासी। जैसे की मुसाफिर रास्ता भूल कहीं और भटक गया हो। पता तो मालूम था पर याद न आ रहा हो। एक घबड़ाहट, एक बेचैनी, एक गलती का अहसास जैसे कचोट रहा हो। 

अजीत बाबु को चंद सेकंड लगे पहचानने में। पहले शक सा हुआ  ये वही तो नहीं? फिर एक टक देखने के बाद यकीन हुआ हां यह वही तो है। कुसुम... हमारी कुसुम...मेरी कुसुम। अजीत बाबु भूल गए कि जिस कुसुम को वे जानते थे , जिस कुसुम के अनुराग में वे मुग्ध हो जग परिवार को त्यागने का एक समय निर्णय ले चुके थे उस कुसुम और इस अधेड़ उम्र की महिला में वर्षों का फासला था। 

अजीत बाबु आगे बढ़े। कुर्सी तक पहुंच कर थोड़ा आगे झुक कर नम्रता से संबोधित किया, "कुसुम! तुम कुसुम ही हो न? मुझे पहचाना?" वह महिला चौंक कर अजीत बाबु की तरफ देख कर बोली, "आप मुझे जानते हैं? मैंने आपको पहचाना नहीं" । अजीत बाबु झेंप गए। क्या एक ही नाम और शक्ल के दो शख्स हो सकते हैं? क्या उन्होंने हड़बड़ी में कोई गलती कर डाली? क्या ये वो कुसुम नहीं? इन प्रश्नों के उत्तर ढूंढते हुए अजीत बाबु को ये ख्याल ही नहीं आया कि इतने सालों बाद उनकी प्राक्तन प्रेमिका उसे भुला सकती है या उसे न पहचानने का ढोंग कर सकती है।

अजीत बाबु कुसुम को याद दिलाने ही वाले थे कि एक हंसमुख व्यक्ति उनकी ओर बढ़े और पूछा, " क्या आप मेरी पत्नी से बात कर रहे हैं? क्या आप उनके पूर्व परिचित हैं? अजीत बाबु फिर झेंप गए। उन्होंने कैसे भुला दिया कि कुसुम शादी शुदा है। उनकी इस तरह एक शादी शुदा स्त्री से आगे बढ़ कर बात नहीं करनी चाहिए थी। पर उसके तुरंत बाद ही उनको ख्याल आया कि वे तो कुसुम को शादी से पहले से ही जानते थे। तो इसमें क्या ही हर्ज है कि उन्होंने किसी पुराने मित्र से वार्तालाप करने की पहल की । हां, प्रेमिका से पहले कुसुम उनकी दोस्त ही तो थी। सबसे अच्छी दोस्त।

अजीत बाबु ने सर हिलाकर हामी भरी। वह अपरिचित, हंसमुख व्यक्ति थोड़े झिझके । फिर बड़ी क्षमापूर्ण स्वर में बोले, " बुरा मत मानिएगा। मेरी पत्नी को अल्जाइमर है यानी भूलने की बीमारी। उन्हें आप शायद याद न हो"।

अजीत बाबु सकपकाकर बोले, "अल्जाइमर?" वह तो वृद्धावस्था के लक्षण है"। 

कुसुम के पति ने अजीत बाबु की बात को काटते हुए कहा, " नहीं ये एक गलतफहमी है। अल्जाइमर किसी भी उम्र में हो सकती है। कुसुम को तो शादी के कुछ साल बाद ही हो गया था। पर आप कुसुम को कैसे जानते हैं?"

अजीत बाबु उत्तर न दे सके। क्या वह अपराधबोध था या अचानक एक बड़ा झटका लगने का ट्रॉमा? अजीत बाबु को समझ न आया। उनके आंखों के सामने उनके कॉलेज के दिन, कुसुम से परिचय, उससे दोस्ती फिर प्रथम प्रणय निवेदन, पहले पहले छुप छुप के मिलना फिर साहस संचित होने के बाद किसी की परवाह न करते हुए एक दूसरे से घुलना सब आंखों के सामने सिनेमा के दृश्यों की तरह एक के बाद एक तैरने लगा। 

अजीत बाबु ज्यों त्यों शादी के मंडप से बिना कुछ खाए, बिना अपने कलिगों से मिले, बिना नव दंपति को मुबारकबाद दिए  किसी तरह निकल आए। रात हो चुकी थी। रास्ते सुनसान हो गए थे। चलते चलते अजीत बाबु कहां निकल आए थे उन्हें भी नहीं पता था। केवल मन के अंगने में एक मुरझाई हुई फूलों की क्यारी सुगंधहीन, रंगहीन दिखाई पड़ रही थी। 

और तभी सुशीला की मुखमंडल अजीत बाबु के आंखों के आगे चमकने लगी। भूख का एहसास होते ही सुशीला के हाथ की बनाई हुई रोटी , सब्जी और अचार अनायास ही मुंह में पानी का संचार करने लगी। शादी पे जाना है सुनके सुशीला ने अपने हाथों से अजीत बाबु के पहने हुए कपड़े प्रेस कर दिए थे। उसकी हाथों के स्पर्श अजीत बाबु मानो कपास के बुनाई में अनुभव करने लगे। इतने वर्षों बाद अजीत बाबु को अनुभव हुआ कि सुशीला ने बड़ी ही निपुणता से उनकी गृहस्थी संभाली है, बच्चों की लिखाई पढ़ाई में मदद, अनुशासन और देखभाल की है , सांस ससुर की सेवा में कोई कमी नहीं रखी है और अजीत बाबु के कंधे से कंधा मिलाकर बुरे दिनों में नौकरी कर संसार धर्म निभाया है। 

आज उस जनमानवहिन सड़क पर खड़े खड़े अजीत बाबु की आँखें सुशीला और उसकी दायित्वबोध , सहनशीलता और बुद्धिमत्ता की प्रशंसा से भर आई। कभी कभी हीरा हाथ के पास होते हुए भी उसका मूल्यांकन करने में इंसान चूक जाता है। अजीत बाबु खुद को कोस ही रहे थे कि पीछे से क्रिंग क्रिंग की आवाज आई। अजीत बाबु ने मुड़ कर देखा तो एक ऑटो दृश्यमान हुआ। हाथ बढ़ाकर ऑटो को रोकते हुए जोर से वे बोले, "स्टेशन"।

***

अजीत बाबु की अधूरी प्रेम कहानी यही समाप्त होती है परंतु पाठक पाठिकाओं के लिए कुछ मूल प्रश्न भी छोड़ जाती है। क्या इस घटना के पश्चात अजीत बाबु अपनी रोजमर्रा के जीवन में संतुष्टि ढूंढ पाएंगे ? क्या उनको कुसुम की याद अब भी सताएगी? और जब जब कुसुम याद आएगी क्या वे सुशीला के साथ खर्चों का ब्यौरों को लेकर तर्क वितर्क में लिप्त होंगे ?

मनुष्य एक अद्भुत जीव है। उसे जो जीवन में मिलता है उसे वह अपना अधिकार समझ झटपट दबोच लेता है और जो नहीं मिलता है उसकी प्रतिक्षा में उम्र भर अफसोस करता रहता है। क्या अजीत बाबु इन वास्तविकताओं और इंसानी कमजोरियों के ऊपर उठ पाएंगे? आपको क्या लगता है?